মানুষের অসাধ্য কিছু নেই। চাঁদে তো গিয়েছিল সেই কবে, অচিরে মঙ্গলে পাড়ি জমাবে মানুষ। হায়তো স্থাপন করবে বসতি। সায়েন্স ফিকশন মুভিতে আমরা কিন্তু এরকমটাই দেখি। অনেক পুরনো সায়েন্স ফিকশন মুভিতে হ্যান্ডহেল্ড ফোন, ওয়াচ ফোন, পোর্টেবল কম্পিউটার ইত্যাদি আমরা দেখেছি যখন বাস্তবে এগুলোর অস্তিত্ব ছিল না। আরও পেছনে গিয়ে যদি আমরা লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির হেলিকপ্টারের ডিজাইন অথবা জুল ভার্নের সাবমেরিনের গল্পের কথা চিন্তা করি তাহলে সহজে অনুধাবন করা যায় মানুষের চিন্তা একসয়ম বাস্তবে পরিনত হয়। অর্থাৎ, এই যে সাইফাই মুভি অথবা গল্প আমরা দেখি অথবা পড়ি সেগুলো একদিন সত্যি হবে।
পুরো বিষয়টি যে সবসময় পজিটিভ হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। টারমিনেটর মুভির কথা চিন্তা করুন। সেখানে দেখানো হয়েছে ভবিষ্যত পৃথিবীর করুন অবস্থা। মানুষের পরাজয়। হ্যাঁ, আপনি অথবা আমি, আমরা সবাই চাই ভাল কিছু হোক। কিন্তু ভাল কিছু করতে গিয়েও মাঝে মাঝে দূর্ঘটনাবশত এমন কিছু হয় যার জন্য পুরো বিশ্ববাসীকে কষ্টভোগ করতে হয়।
মঙ্গলে মানুষ বসতি স্থাপন করবে। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ সেখানে পাড়ি জমাবে। চাপ কমবে পৃথিবীর উপর। বিষয়টা ভাবতে ভালই লাগে। কিন্তু এসব কিছুর মাঝেই যখন রোবট অ্যাপোক্যালিপস এর সম্মুখীন মানব জাতি হবে তখন কেমন হবে বিষয়টি?
এসব বিষয় নিয়ে আমি নই ভাবছেন ইলন মাস্ক। তিনি একজন ইনভেনটর। হাই-টেক কোম্পানি টেসলা এবং স্পেসএক্স এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি পরিচিত। টেসলা বানায় ইলেকট্রিক পাওয়ার্ড গাড়ি এবং স্পেসএক্স তৈরি করে মহাকাশ যান। ইলন মাস্ক পৃথিবীর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। তিনি ধারণা করছেন টার্মিনেটর মুভির ক্লাইম্যাক্স এর মত দশা হবে পৃথিবীর।
গত মঙ্গলবার সিএনবিসি নিউজে একটি ইন্টারভিউতে তিনি সরাসরি তার মনের ভেতরের আতংক প্রকাশ করেন। তার ভয় রোবটরা পৃথিবী দখল করে নিবে, কারণ মানুষ একসময় অত্যাধুনিক ক্ষমতা সম্পন্ন রোবট তৈরিতে সক্ষম হবে।
তার এই ভয়ের পেছনে রয়েছে নতুন ইনভেস্ট করা কোম্পানি ভিকারিয়াস। ইলন মাস্ক এই কোম্পানিতে বড় ধরনের ইনভেস্ট করেছেন। Vicarious মূলত আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স রিসার্চ ভিত্তিক কোম্পানি। তাদের মিশন হচ্ছে মোটর কন্ট্রোল, ল্যাংগুয়েজ ও ভিশনে হিউম্যান লেভেল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে আসা। অন্যভাবে বলতে গেলে তারা এমন কিছু একটা বানাতে চায় যা মানুষের মত দেখতে পারবে, কথা বলতে পারবে এবং চলাফেরা করতে পারবে।
তাদের কথা থেকে যা বোঝা গেল, তারা আসলে ফিউচারিস্টিক রোবট তৈরি করতে চাচ্ছে। কারণ প্রযুক্তির উন্নতি গত ১০ বছরে যেভাবে হয়েছে তাতে করে পূর্নাঙ্গ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা সম্পন্ন রোবট তৈরি কঠিন কিছু নয়। ছোটবেলায় আমরা বাংলা রচনায় বিজ্ঞান ও এর ভবিষ্যত রচনায় রোবটের কথা লিখতাম। তখন হয়তো ভাল করে অনুধাবন করতে পারি নি। এখন পারছি।
ইলন মাস্ক অনুধাবন করেছেন তিনি বিপদজ্জনক একটি কাজে হাত দিয়েছেন। তিনি নিজেই বলেছেন: "I think there is a potentially dangerous outcome there." তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল Dangerous বলতে কী বোঝাচ্ছেন? তিনি উত্তরে বলেন, "There have been movies about this, you know, like Terminator." ভবিষ্যতে যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক রোবট। কিন্তু ভবিষ্যতে যুদ্ধ না হওয়াটাই আমাদের কাম্য।
মানুষটি বর্তমানে স্পেস মিশন নিয়ে NASA'র সাথে কাজ করছেন এবং পৃথিবীতে ইলেক্ট্রিক গাড়ির পরিমান বৃদ্ধির ব্যবস্থা করছেন। সেই সাথে মহাকাশে সহজে ভ্রমনের বিষয়টিও তিনি দেখছেন। সেই সাথে যোগ হলো তার মানুষ ও মেশিনের ভবিষ্যত যুদ্ধ নিয়ে আতংক। আচ্ছা, আপনাদের মনে আছে কী হয়েছিল টার্মিনেটর মুভির পরিণতি ? একটা কম্পিউটার সিস্টেম যার নাম "স্কাইনেট" নিজে থেকে সচেতন হয়ে যায় এবং মানবজাতির সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফলাফল হিসবে আমরা দেখি হিউম্যানয়েড রোবট যারা একে একে মানুষ মেরে ফেলেছিল। এ কথা লিখতে গিয়ে আমার গুগলের হিউম্যানয়েড রোবট প্রকল্পের কথা মনে আসলো। ভবিষ্যতে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা আমি উড়িয়ে দিতে পারছি না।
কিছুদিন আগে একটা কম্পিউটার টুরিং টেস্টে প্রথমবারের মত পাশ করে। একটা কম্পিউটার অত্যন্ত চালাক না হলে এই টেস্টে পাশ করা সম্ভব না। মানুষের কাছাকাছি পর্যায়ে কম্পিউটার চিন্তা করতে পারলেই কেবল এমনটা সম্ভব। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সের অগ্রগতি প্রশংসা করার মত। তবে হিতে বিপরীত যেন না হয়।
আরেকটা বিষয় জানিয়ে লেখাটি শেষ করছি। Vicarious কোম্পানি তে শুধু ইলন মাস্ক না, ইনভেস্ট করেছেন অ্যামাজন সিইও জেফ বেজোস, ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ, ইয়াহুর কো ফাউন্ডার জেরি ইয়াং এবং আরও কয়েকজন হাই প্রোফাইল টেক ইনভেস্টরস। সুতরাং অর্থের কোনো অভাব নেই। অন্যদিকে কাজ করে চলেছে ডারপা ও বোস্টন ডাইনামিক্স এর প্রতিষ্ঠান। রোবট তৈরি হবে। হিউম্যানয়েড রোবট। আউটকাম যেন বিপদজ্জনক না হয় সে জন্য ইলন মাস্ক সবাইকে সতর্ক করেছেন এবং নিরাপত্তা সবার আগে নিশ্চিত করার প্রতিজ্ঞা করেছেন।