আমি রিক্সা থেকে নামলাম। রিক্সা ভাড়া দিতে যাব এমন সময় কোথা থেকে একটা ছোট্ট ছেলে আমার পাশে এসে দাড়ালো:
ছেলে: স্যার, দশটা টেকা দেন
আমি: কিরে… (রিক্সা ভাড়া পরিশোধ করে ছেলেটার দিকে তাকালাম)
ছেলেটা সম্ভবত টোকাই। কারণ তার কাধে ছিল বিশাল এক ঝোলা। বা হাতের কুনুই দিয়ে ঝোলাটি ধরে রেখেছিল সে। বয়স হতে পারে সর্বোচ্চ ৬।
স্বাভাবিকভাবেই ছোট্ট বাচ্চাদের মত কিউট একটা মুখ ছেলেটার।
ছেলে: স্যার দশ টেকা দেন ভাত খামু
আমি: মানে কি! দশ টাকায় আবার কিরকম ভাত খাবি? (বলে চলে যাচ্ছিলাম একটা স্টোরের ভেতর)
ছেলে: স্যার দেন স্যার দশটা টেকা খিদা লাগছে
আমি: (প্রায় ঢুকে গিয়েছি স্টোরে) দশ টাকায় ভাত কোথায় পাওয়া যায়?
ছেলে: (হাত দিয়ে দূরে দেখিয়ে) ওইযে ওইখানে খামু
আমি: আচ্ছা দাড়া। (বলে স্টোরের ভেতর ঢুকে গেলাম)
আমি: (কাজ শেষ করে বাইরে এসে দেখি ছেলেটার সাথে একইরকম আরও একটা ছেলে সিড়িতে বসে আছে। তার সাথেও একটা ঝোলা।) কিরে তুই একটা থেকে দুটা হলি কেমনে?
ছেলে: (যে দশ টাকা চেয়েছিল) হিহি
আমি: (কথা না বাড়িয়ে) চল কোথায় দশ টাকায় ভাত পাওয়া যায় দেখি। তোরা আগে হাট।
প্রায় ১ মিনিট হাঁটার পর ফুটপাতে একটা জরাজীর্ণ হোটেলের সামনে এসে দাড়ালাম।
ছেলে: (হোটেল মালিককে বলছে) ভাত দেন
আমি: (ছেলেটাকে থামিয়ে হোটেল মালিককে জিজ্ঞাসা করলাম) ভাই এখানে ভাত প্রতি প্লেট কত ?
হোটেল মালিক: ১০ টাকা।
আমি: ভাতের সাথে কি আছে? এই দুইজনকে ভাত খাওয়ান।
হোটেল মালিক: (তার একমাত্র কর্মচারীকে উদ্দেশ্য করে) ওই দুই ভাইরে ভাত আর ডিমের তরকারী দে।
হোটেল মালিকের সাথে কথাবলার ফাঁকে ওই দুইজন প্লেট নিয়ে বসে হাত ধুচ্ছিল। আমি দেখতে পেলাম ওরা প্লেটে হাত ধোয়ার পর পানি কুচকুচে কালো হয়ে গেল। হোটেল মালিক নিরাপদ ধমকের সুরে বললেন “বাইরে ড্রামে পানি আছে আর সাবান রাখা আছে। যা আগে বাইরে যা” ছেলে দুটো সাথে সাথে বাইরে এসে সাবান দিয়ে হাত কচকচ করে ধুতে লাগল। পুরো দৃশ্যটা ছিল খুবই কিউট। সম্ভবত এই দৃশ্যটির কল্যানে আমার ভাল লাগা এবং এই স্ট্যাটাসের অবতারণা।
আমি আর বেশিক্ষণ সেখানে অবস্থান করলাম না। হোটেল মালিককে দু’জনের বিল এবং অতিরিক্ত ১০ টাকা দিলাম। যাওয়ার আগে দশটাকা চাওয়া ছেলেটাকে বললাম খাওয়া শেষ করে হোটেল মালিকের থেকে ১০ টাকা নিয়ে যেতে। উত্তর পেলাম “আচ্ছা” (শুদ্ধ বাংলা)।
প্রথম কথা আমরা সবাই মানুষ। এবং এর পরের কথাটা হচ্ছে আমরা সবাই বাংলাদেশি। বাচ্চাগুলোও তাই। ওরা ভিনগ্রহের প্রাণী না যে দেখলে আঁতকে উঠতে হবে। যে কারণে আতঁকে উঠছেন বলে মনে হচ্ছে আপনার সেটা হয়তো আপনি চাইলে মিনিমাইজ করতে পারবেন। ওদেরকে বকাঝকা, ধমক দিলে অথবা খারাপ ব্যবহার করলে ওরা সেটা দীর্ঘদিন মনে রাখবে। ঠিক যেমন আপনার পরিচিত কোনো বাচ্চা সবকিছু মনে রাখে।
চিন্তা করুনতো, ১০/১৫ বছর সবার কাছ থেকে খারাপ ব্যবহার পেতে পেতে একটা বাচ্চা বড় হয়ে কিরকম হতে পারে? সব বাচ্চাদের মত তারাও শেখার ক্ষমতা রাখে শুধু সুযোগ সুবিধা ঠিক মত পায় না। ওরা যে গরীব এবং সুবিধাবঞ্চিত সেটা ওদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই।
যদি আপনার পর্যাপ্ত পরিমান সময় থাকে তাহলে একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন “স্যার দশটা টেকা দেন”, “আপা খিদা লাগছে ভাত খামু” ইত্যাদি বলে পথচারীকে বিরক্ত করা ছোট্ট ছেলেমেয়ে গুলোকে কোনভাবে খুশি করা যায় কিনা।