সময়ের মূল্য


প্রায় একবছর হতে চলল যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছি। এখন পর্যন্ত দেশে থাকা আত্বীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে বেশি শুনেছি সেটা হচ্ছে "দেশে আসবে কবে?" অদ্ভুত ব্যপার হচ্ছে এই প্রশ্নটির উত্তর বেশ কয়েক রকমের দিয়েছি। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে আসার প্রথম মাসে এই প্রশ্নের উত্তর ছিল "রোজার ঈদে আসব।" তারপর রোজা গেল ঈদ গেল। এরপর উত্তর দিয়েছি, গরুর ঈদে দেশে যাব। সেটাও শেষ হয়ে গেল। এর মাঝে অবশ্য আরও কয়েকবার ভিন্ন ভিন্ন প্লান করেছি দেশে যাওয়ার। নানাবিধ কারনে সবসময় পিছু হেঁটেছি। দেশে আসার ইচ্ছেটা মনে আসা যতটা সহজ ঠিক ততটাই কঠিন বাস্তবতা। একটা জিনিস ভেবে খুব ভাল লাগে যে, দেশে সবাই আমাকে কম বেশি মিস করছে। এই বিষয়টা হয়ত দেশের বাইরে এসে না থাকলে বোঝা যেত না সহজে।

Photography by Rmehdee - Delray Beach, Florida

এই প্রায় একবছর সময়ে এখানে থেকে আমি বেশ কিছু জিনিস নতুন করে উপলব্ধি করেছি। তার মাঝে একটি হচ্ছে "সময়ের মূল্য"। ছোটবেলায় রচনা শিখেছিলাম এই বিষয়টি নিয়ে। দেশে থাকাকালীন সময়ে কর্মজীবন যা পার করেছি এবং অন্যান্যদের টা দেখেছি সেটা বেশ আরামদায়ক এখানকার তুলনায়। এটার সবচেয়ে বড় কারণ দেশে ঘন্টা অনুযায়ী পেমেন্ট করা হয় না। সুতরাং কারও এই বিষয় নিয়ে মাথাব্যাথা থাকে না, রিল্যাক্স মুডে কাজ করা যায়। কিন্তু এখানে এর বিপরীত চিত্র দেখেছি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজের টিচার, রোড সাইডের ঘাস কাটুরে দল, সরকারী অফিস এবং ব্যংকের ক্লার্ক এমনকি নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশরাও ঘন্টা হিসেবে কাজ করে থাকে। প্রতি দিন অথবা ঘন্টা অনুযায়ী অথবা সপ্তাহ অনুযায়ী তাদের কাজ অ্যাসাইন করা থাকে। তারা সেটা যথারিতী মেনে চলে। অন্যথায় পেমেন্ট হয় না অথবা ফায়ার করা হয়। যদিও এখানে পেইড লিভ থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল বেনিফিট রয়েছে। কিন্তু সবাই সময়ের মূল্য দিতে বাধ্য। একটি কাজের সাথে আরেকটি কাজ জড়িত।

নতুন কেউ যদি দেশ থেকে এসে একটু খেয়াল করে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে মনে মনে এখানকার মানুষদের জন্য খারাপ লেগে যেতে পারে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। এখানকার মানুষজন এটাকেই দৈনন্দিন জীবন মনে করে থাকে। যারা অন্য দেশ থেকে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া থেকে এদেশে এসে কাজ করছেন তারা প্রথমদিকে একটু কষ্ট মনে হলেও পরবর্তীতে ঠিকই মানিয়ে নিচ্ছেন। সপ্তাহে ৫ দিন অথবা ৬ দিন কাজ করার পর যখন ছুটি মিলে তখন সবাই আনন্দে ভেসে যায়, যার যার সামর্থ অনুযায়ী মজা করে। এই উইকেন্ডে করা আনন্দ পার্টি করাটাকে আমরা বাঙালিরা অনেকেই হয়ত পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখি না। এর কারণ আমরা বাঙালিরা এভাবে কাজ করে অভ্যস্ত নই।

সব শেষে বলব, বাঙালিরা যে সময়ের মূল্য বোঝে না ব্যপারটা সেরকম নয়। আমরাও সময়ের মূল্য দিই তবে আমাদের মত করে। তবে একথা সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা মানুষজন কষ্ট যেমন বেশি করে ঠিক তেমনি আনন্দও বেশি করে।

Our Guarantee

Share your guarantees with your customers.

Our Guarantee

Share your guarantees with your customers.

Our Guarantee

Share your guarantees with your customers.

Our Guarantee

Share your guarantees with your customers.