সালঃ ২০২৫, স্থানঃ নেভাডা, এরিয়া ৫১ রিসার্চ ল্যাব, লেভেলঃ মাইনাস ৪। গুবরে পোকা ক্লোনিং এর কাজ করছে একদল পরিচয়হীন বিজ্ঞানী। পোকাগুলোর স্বাভাবিক মস্তিষ্ক অপসারণ করে সেখানে বসানো হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের এ্যাকুয়া প্রসেসর। এটাকে খালি চোখে দেখলে মনে হবে এক বিন্দু স্বচ্ছ পানি কিন্তু এর কর্মক্ষমতা মানুষের চেয়ে কয়েকশত গুন বেশি। ঘটনাটা ঘটল তখনই যখন বিজ্ঞানীদের একজন ভুল করে গুবরে পোকাদের মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ সুইচ অন করে দেয়। ঝাঁকে ঝাঁকে গুবরে পোকা গুলো ভেন্টিলেশন পাইপ দিয়ে ফ্যাসিলিটির বাইরে বের হয়ে আসে। এদেরকে গুলি করে বা আগুন ছুড়েও থামানো যাচ্ছে না। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এ দৃশ্য দেখা মাত্রই উড়ে আসে কয়েকটি যুদ্ধ বিমান। কি করবে ঠিক করতে না পেরে সম্পূর্ণ ফ্যাসিলিটি ধ্বংস করে দেয়ার ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালক। ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে, অসংখ্য গুবরে পোকা তাদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সরে পড়েছে ঘটনাস্থল থেকে। পুরো যুক্তরাষ্ট্রে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়, ঘোষণা করা হয়: প্রায় হাজারেরও বেশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন গুবরে পোকা ছড়িয়ে পড়েছে দেশটিতে। দেখা মাত্রই যেন মেরে ফেলা হয়। সে সময় সদ্য ধ্বংস হওয়া ফ্যাসিলিটির ১৮ মাইল দূরে একটি ঘরে বসে মাথায় হেডসেট লাগিয়ে গেম খেলছিল রবার্ট। হঠাৎ করে পায়ে কীসের যেন কামড় খেয়ে লাফিয়ে উঠল সে। হেডসেট খুলে রেখে সে তার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে, একটি লাল রঙের ছোট্ট গুবরে পোকা মরে উল্টে আছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে নিজের অনুভূতি শক্তি হারায় সে, তার কাছে মনে হয় অন্য কেউ তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
উপরের ঘটনাটি যে কাল্পনিক, সেটা শুরুতেই বুঝেছেন। একটা দূর্ঘটনা থেকে পুরো জগতে কত বড় কিছু হয়ে যেতে পারে সেটা কল্পনা করার চেষ্টা করছিলাম মাত্র। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের সর্বোচ্চ সীমা কতটুকু? উপরের ঘটনা কাল্পনিক হলেও "এরিয়া ৫১" নামক জায়গাটা কিন্তু আছে। এটার আসল নাম হচ্ছে "নেভাডা টেস্ট এন্ড ট্রেইনিং রেঞ্জ"। সকল প্রকার গবেষণামূলক কার্যক্রম সেখানে চালানো হয়ে থাকে বলে শুনেছি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়েও যদি হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যে হারে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে করে ছোটবেলায় পড়া সায়েন্স ফিকশন গল্পগুলো বাস্তবে নিজের চোখে দেখার অপেক্ষা করছি। কিন্তু কিছু জিনিস নিয়ে কি বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? আমি আসলে মেনশন করছি আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স অথবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারটি। এই ক্ষেত্রে যেভাবে পরিবর্তন হচ্ছে তা হয়তো আমরা ঠিকভাবে চিন্তা করে দেখিনি কখনও। ধরুন গুগলের কথা, তাদের সার্চ ইঞ্জিন কিন্তু স্বয়ংক্রিয়। তৈরির পর থেকে আজ পর্যন্ত এর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। তৈরি কিন্তু করছে মানুষ। একটা সফটওয়্যার, লিখবে মানুষ, চালাবেও মানুষ। কিন্তু যদি সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় মানুষের তখন ব্যাপারটি কেমন দাঁড়াবে?
কত শত রোবট তৈরি হয়েছে আজ পর্যন্ত। কোন কোনটিতে কিন্তু উচ্চ মানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও প্রদান করা হয়েছে। DARPA এর রোবটের কথা চিন্তা করুন। কিংবা ধরুন গুগলের চালকবিহীন গাড়ী। এখনও রাস্তায় নামে নি ঠিকভাবে তবে এর কাজ অত্যন্ত দ্রুত এগিয়ে চলছে। কেমন হবে যদি পৃথিবীতে ব্যবহৃত ৫০ ভাগ ডিভাইসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থাকে? এবং তখন কোন ভুলের কারণে অথবা কোন অতি মেধাবী উন্মাদ বিজ্ঞানীর কল্যাণে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ সেন্ট্রালাইজড হয়ে যায়? ফলাফল ভাল হবে নাকি খারাপ হবে জানি না ,তবে আমি দুঃখের সাথে বলছি, প্রযুক্তির উন্নতি আমি চাই তবে সেটা যেন ধ্বংস না ডেকে আনে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে সব ঠিক আছে, কিন্তু প্রযুক্তির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত চিন্তা করুন। যারা বিজ্ঞানী তারা থেমে থাকার নন, তাদের মধ্যে এক ধরনের সৃষ্টির নেশা কাজ করে। তারা সেটা করবেনই।
আমার মতে একটি যন্ত্রের নিজের মত করে ভাবার চিন্তাশক্তি থাকা উচিত নয়। কারণ সে চিন্তা যতই করুক তার মধ্যে কোন আবেগ থাকা সম্ভব নয়। আপনি হয়তো বিষয়টি জানেন। এই জিনিসটা একমাত্র প্রাণী জগতে বিদ্যমান। যন্ত্রের ভেতর কোন মোরাল থাকবে না কোন সমবেদনা থাকবে না। যদি থাকে তাহলে সেটাও হবে কৃত্রিম, সত্যিকার নয়। বিশ্বাস করবেন সেটা ? যদি একটা যন্ত্রকে নিজের মত করে চিন্তা করার জন্য তৈরি করা হয় তাহলে আমাদের প্রয়োজন কোথায় ? আমরা কেন বাস করব পৃথিবীতে? তার উপর যন্ত্রটাকে করা হবে সুপিরিয়র, শতগুণ কর্মক্ষম ও শক্তিশালী, তাহলে তারাই বা আমাদের চাইবে কেন? আপনি কি সৃষ্টির সেরা নন ? ইন্টারনেট অ্যাকসেস! এআই (AI) যদি ইন্টারনেটে ব্যবহার করা হয় (ইতোমধ্যে হয়েছে এবং দিন দিন উন্নত হচ্ছে) তাহলে স্বাভাবিকভাবেই একটা মানুষ যা জানবে তার চেয়ে হাজার গুন বেশী জানবে সেই সফটও্যারটি। অবশ্যই এটা আমাদের উপকারে আসবে। যখন তখন সবকিছু উত্তর পাবেন সমাধান পাবেন। তবে যখন সফটও্যারটি আমাদের বিরূদ্ধে কাজ শুরু করবে তখন কী করবেন? আপনার উত্তর হতে পারে একটি প্রশ্নের মাধ্যমে: "এত জ্ঞানী একটা জিনিস/যন্ত্র/সফটওয়্যার কেন আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করবে? কেন ক্ষতি করবে?" কারণ এদের মানুষের মত আবেগ নেই, এরা কাজ করে লজিকের ভিত্তিতে, যখন যেটা সঠিক বলে মনে হবে তখন সেই সিদ্ধান্ত তারা নিবে। এর কিন্তু ছোট ছোট বহু উদাহরণ আমরা আজকাল দেখি, আমাদের হাসি পায়, অপারেটিং সিস্টেমের বাগ বলে উড়িয়ে দেই। কিন্তু ভবিষ্যত চিন্তা করুন, জিনিসগুলো দিন দিন স্মার্ট হচ্ছে, তাই নয় কি? আমরাই তো বানাচ্ছি।