গুগলে সার্চ করলে ইউনিভার্সের বয়স জানা যায়। এই ইউনিভার্স ১৩.৮ বিলিয়ন বছরের পুরনো। বিগ ব্যাঙ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সময়টাকে যদি একটা ক্যালেন্ডার ইয়ার হিসেবে কল্পনা করা হয় তাহলে ব্যপারটি কেমন দাড়াবে?
কসমিক ক্যালেন্ডারের জানুয়ারীর ১ তারিখের প্রথম সেকেন্ডে বিগব্যাঙ সংঘটিত হয়। জন্ম নিল আমাদের ইউনিভার্স। এর পর থেকে যা সংঘটিত হয়েছে তা এই ইউনিভার্সেই হয়েছে।
১৩.৮ বিলিয়ন বছরের কসমিক ক্যালেন্ডার প্রতিটি মাস প্রায় ১ বিলিয়ন বছর। প্রতিটি দিন প্রায় ৪০ মিলিয়ন বছর। তাহলে বিষয়টি যেমন দাড়াচ্ছে:
জানুয়ারী ১: বিগ ব্যাঙ সংঘটিত হল এবং ইউনিভার্সের সম্প্রসারণ শুরু হল
জানুয়ারী ১০: বিগ ব্যাঙ এর পর প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর সময় অতিক্রান্ত হল। ইউনিভার্সের সকল উত্তপ্ত বস্তু ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে শুরু করল। ইউনিভার্সের সকল কিছু গ্র্যাভিটির কারণে পুনরায় উত্তপ্ত হতে শুরু করল, জন্ম নিল প্রথম নক্ষত্র।
জানুয়ারী ১৩: সকল নক্ষত্র একত্রিত হওয়া শুরু করল এবং প্রথমবারের মত তৈরি হল নক্ষত্রের ছোট্ট একটি গ্যালাক্সি।
মার্চ ১৫: প্রায় ১১ বিলিয়ন বছর আগে। ছোট ছোট গ্যালাক্সি গুলো ক্রমান্বয়ে বড় হওয়া শুরু করল এবং তৈরি হল আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। আমাদের সূর্যের মত লক্ষ কোটি সূর্যের সমারোহ ছিল সেখানে। নক্ষত্রের সংঘর্ষ ছিল নিয়মিত ব্যপার। সংঘর্ষে বিস্ফোরিত হতে লাগল নক্ষত্র। নক্ষত্রের এই মৃত্যুকে বলা হয় সুপারনোভা। (Blazing death of a giant star)
অগাস্ট ৩১: প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে। জন্ম নিল আমাদের সূর্য। তৈরি হতে থাকল পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ।
সেপ্টেম্বর ২১: প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে। পৃথিবীতে শুরু হল প্রানের বিকাশ। অবশ্যই সেটা জলে।
নভেম্বর ৯: প্রানের বিকাশে উন্নতি দেখা গেল। অতিক্ষুদ্র জলজ প্রাণীগুলো শ্বাস নেয়া, নড়াচড়া করা, খাওয়া, পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলা শুরু করে। FYI: They also invented sex.
ডিসেম্বর ১৭: প্রথমবারের মত জলের প্রাণী স্থলে উঠে আসে। প্রানের বিকাশে যোগ হয় নতুন মাত্রা। জলজ প্রাণী থেকে জঙ্গল, ডাইনোসর, পাখি, কীটপতঙ্গ এই সকল কিছুই ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বিবর্ধিত হয়।
ডিসেম্বর ২৮: উদ্ভিদে প্রথমবারের মত ফুল ফোটে।
ডিসেম্বর ৩০ (সকাল ৬:২৪ মিনিট): প্রায় ১৩ বিলিয়ন বছর পর। মহাকাশ থেকে গ্রহাণু পৃথিবীর বুকে আছড়ে পরে। ১০০ মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীর বুকে ডাইনোসরের রাজত্ব শেষ হয়।
ডিসেম্বর ৩১ (রাত ৯:৪৫ মিনিট): আজ থেকে ৩.৫ মিলিয়ন বছর আগে। প্রাণের বিবর্তনে মানুষের পথ চলা শুরু হয়।
শেষ ৩০ সেকেন্ড: ৩০,০০০ বছর আগে। প্রথমবারের মত মানুষ গুহার ভেতর পাথরের দেয়ালে পশুর ছবি এঁকেছে।
শেষ ২৫ সেকেন্ড: ১০ হাজার বছর আগে: মানুষ কৃষি কাজ ও পশু পালন শুরু করে।
ডিসেম্বর ৩১ (রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড): এই শেষ ১৪ সেকেন্ড হচ্ছে মানব সভ্যতার চরম শিখর। মানুষের যত ইতিহাস লিপিবদ্ধ, যত আবিষ্কার, যত যুদ্ধ, যত ভালবাসা, যত ভাবনা এমনকি এই যে আপনি এখন পড়ছেন তার সবই এই ১৪ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে নিহিত।
শেষ ১৪ সেকেন্ড: ৬০০০ বছর আগে। মানুষ লিখন পদ্ধতি চালু করে।
শেষ ৭ সেকেন্ড: মূসা আ: এর জন্ম
শেষ ৬ সেকেন্ড: গৌতম বুদ্ধর জন্ম
শেষ ৫ সেকেন্ড: যিশু খ্রিস্টের জন্ম
শেষ ৩ সেকেন্ড: মুহাম্মদ স: এর জন্ম
শেষ ২ সেকেন্ড: পৃথিবীর দুটি ভাগ একে অপরের সন্ধান লাভ করে। কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার।
শেষ ১ সেকেন্ড (বর্তমান): প্রথম ও ২য় বিশ্ব যুদ্ধ। প্রকৃতির রহস্য উদঘাটনে বিজ্ঞানের সক্রিয় ব্যবহার শুরু। মানুষের চাঁদে পা রাখা এবং এখন পর্যন্ত সব কিছু যা চলছে।
রেফারেন্স: উইকিপিডিয়া, টিভি সিরিজ: Cosmos A Space-Time Odyssey.
লেখা: ২০১৪ সাল, ঢাকা, বাংলাদেশ।